অনিয়মিত পিরিয়ড

অনিয়মিত পিরিয়ড সম্পর্কে ১০টি জরুরি তথ্য

মেয়েদের প্রজনন স্বাস্থ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো পিরিয়ড বা মাসিক। প্রজননকালে প্রত্যেক মেয়ে গড়ে ২৮ দিন পরপর পিরিয়ডের চক্র পার করে। তবে সাধারণত ২১ দিন-৩৫ দিন পরপর পিরিয়ড হলেও নরমাল ধরা হয়। স্বাভাবিক পিরিয়ডের স্থায়িত্ব হয় ৫-৭ দিন। উপরিউক্ত সময়ের মধ্যে পিরিয়ড না হলে অথবা স্বাভাবিক স্থায়িত্ব না থাকলে বলা হয় অনিয়মিত পিরিয়ড। নারী স্বাস্থ্যের জন্য যা হতে পারে ঝুঁকিপূর্ণ।

আজ দেহ আপনাদের জানাবে অনিয়মিত পিরিয়ডের ১০ টি কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে। চলুন জেনে নেওয়া যাক বিস্তারিত।

১. বয়সের প্রভাব অনেক

অনিয়মিত পিরিয়ড

১২ থেকে ১৬ বছর বয়সের মধ্যে মেয়েদের প্রথমবার পিরিয়ড শুরু হয়। পরবর্তী ২-৩ বছর পিরিয়ড অনিয়মিত হতে পারে কোনো কারণ ছাড়াই। কিশোরী বয়সের জন্য এটি স্বাভাবিক। সেজন্য এটি নিয়ে চিন্তিত হবেন না।

২. জন্মনিয়ন্ত্রণ পিলসহ অন্যান্য হরমোনাল জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা

অনিয়মিত পিরিয়ড

জন্মনিয়ন্ত্রণের হরমোনাল ব্যবস্থাগুলোর পিরিয়ডের ওপর সরাসরি প্রভাব বিস্তার করে। পিল খেলে পিরিয়ড হালকা হয়ে যায় বা বন্ধ হয়ে যায়। পিরিয়ড চক্রের মধ্যবর্তী সময়ে রক্তপাত ঘটতে পারে পিলের কারণে।

৩. গর্ভাবস্থা এবং বাচ্চাকে বুকের দুধ পান করানোর সময়

অনিয়মিত পিরিয়ড

গর্ভধারণ করলে পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যায়। অনিয়মিত পিরিয়ড হলে বা পিরিয়ড বন্ধ থাকলে প্রেগনেন্সি টেস্ট করে দেখুন। বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য প্রোল্যাক্টিন হরমোন কাজ করে। এই হরমোন পিরিয়ড কে বন্ধ করে রাখে।

৪. পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোমের কারণে পিরিয়ড অনিয়মিত হয়

অনিয়মিত পিরিয়ড

যখন এই রোগ হয় তখন ডিম্বাশয়ে অনেক ছোটো ছোটো সিস্ট বা থলে তৈরি হয়। এছাড়া স্বাভাবিক ডিম্বপাত ব্যাহত হয়। এসময়ে ডিম্বপাত ঠিকমত না হওয়ার কারণে পিরিয়ড ঠিক মত হয় না। সেজন্য উপযুক্ত চিকিৎসার প্রয়োজন।

৫. জরায়ুর টিউমার হলে অনিয়মিত পিরিয়ড হয়

অনিয়মিত পিরিয়ড

অনিয়মিত পিরিয়ডের অন্যতম প্রধান কারণ জরায়ুর টিউমার। একে ফাইব্রয়েড ইউটেরাস বলে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অল্পদিন পরপর পিরিয়ড হয় এবং অনেক বেশিদিন ধরে স্থায়ী হয়। ডাক্তারের পরামর্শ মতো ওষুধ বা অপারেশনে ভালো হয়ে যায় রোগটি।

৬. থাইরয়েড গ্রন্থির যেকোনো রুগি অনিয়মিত পিরিয়ডে ভোগেন

অনিয়মিত পিরিয়ড

থাইরয়েড গ্রন্থির রোগ যাদের থাকে তাদের অনিয়মিত পিরিয়ড হয়। গ্রন্থিটি বেশি সক্রিয় বা কম সক্রিয় দুইক্ষেত্রেই সমস্যা দেখা দেয়। এক্ষেত্রে পিরিয়ড দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে, আবার মিসও হতে পারে।

৭. ওজনের খুব বেশি পরিবর্তন ঝুঁকিপূর্ণ

অনিয়মিত পিরিয়ড

অতিরিক্ত বেশি ওজন লাভ করলে তা বিভিন্ন হরমোন ও ইনসুলিনের মাত্রা পরিবর্তন করে। ফলাফলস্বরূপ পিরিয়ডের চক্রে বাধা পড়ে। আবার হঠাৎ করে অনেক ওজন কমলে পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এসময় ইস্ট্রোজেন হরমোনের ঘাটতির কারণে এমনটা হয়। তাই একেবারে ওজনের খুব বেশি হেরফের না করে ধীরে পরিবর্তন আনা উচিত।

৮. মানসিক চাপকে হেলা করবেন না

গবেষণায় দেখা গেছে যারা মানসিক চাপে থাকে তাদের নিয়মিত পিরিয়ড হয় না। বস্তুত মস্তিষ্কের কিছু অংশের কাজ স্বতঃস্ফূর্তভাবে হ য়না চাপে থাকলে। শুধু তাই নয় পিরিয়ডের জন্য প্রয়োজনীয় হরমোন উৎপাদনের সিগনালও আসেনা তখন মস্তিষ্ক থেকে। তাই পিরিয়ড নিয়মিত রাখতে দুশ্চিন্তাকে দূরে রাখুন।

৯. অতিরিক্ত ভারী ব্যায়াম বা খেলাধুলায় অনিয়মিত হয় পিরিয়ড

অতিরিক্ত ব্যায়ামের ফলে ইস্ট্রোজেন হরমোন ঘাটতি হয়। যারা ওয়েট লিস্টিং করে অথবা অন্যান্য খেলাধুলা এবং ভারী ব্যায়াম করে তাদের পিটুইটারি, থাইরয়েড, অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির স্বাভাবিক কার্যকারিতা হ্রাস পেতে পারে। সেক্ষেত্রে পিরিয়ড অনিয়মিত হবে। তাই মাত্রারিক্ত ব্যায়াম এড়িয়ে চলুন

১০. প্রজননকালের শেষের দিকে অনিয়মিত হতে পারে পিরিয়ড

স্থায়ীভাবে পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগের সময়কে বলে প্রি-মেনোপজ। সাধারণত ৪০- ৪৫ বছরের পর থেকে এই পর্যায় শুরু হতে পারে। পাশাপাশি হরমোনাল পরিবর্তন দেখা যায় এই সময়। যেকারণে মেয়েরা এই সমস্যায় ভোগেন। এমতাবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শ নিন। যথাযথ চিকিৎসায় এই অবস্থা থেকেও উত্তরণ মিলবে।

অনিয়মিত পিরিয়ড সম্পর্কে অনেক খুঁটিনাটি জানতে পেরেছেন না পোস্টটি থেকে? পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না। আপনার পরিচিত সব মেয়েকে তথ্যগুলো জানার সুযোগ করে দিন। ধন্যবাদ, দেহ’র সাথে থাকার জন্য।

Leave your vote

Comments

0 comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *