উচ্চ রক্তচাপ কমানো

উচ্চ রক্তচাপ কমানোর যে ১০টি উপায় আপনাকে জটিল সমস্যা থেকে বাঁচাবে

রক্তচাপ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকাকে উচ্চ রক্তচাপ বলে। এটি হলো নীরব ঘাতক। কেননা তেমন লক্ষণ প্রকাশ না করেই উচ্চ রক্তচাপ আমাদের শরীরের মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে। হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, কিডনি বিকল, দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হওয়া, স্মৃতিশক্তি নষ্ট হওয়াসহ নানা জটিলতা দেখা দেয় এর কারণে। বিশ্বের প্রায় ২৬ শতাংশ লোক এতে ভোগেন। বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর প্রায় ৭.৬ মিলিয়ন লোক মারা যায় উচ্চ রক্তচাপজনিত জটিলতায়।

উচ্চ রক্তচাপ কমানোর জন্য জীবনযাপন পদ্ধতি পরিবর্তন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আপনি বা আপনার পরিবারের সদস্য কেউ কি এতে ভুগছেন? আমরা ‘দেহ‘ আপনার স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমাতে ১০টি উপায় বলে দেবো। ভালোভাবে পড়ে নিন এবং এর জটিলতা থেকে নিরাপদ থাকুন।

১. অতিরিক্ত ওজন ঝরিয়ে উচ্চ রক্তচাপ কমানো যায়

Image by Steve Buissinne from Pixabay

রক্তচাপ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ অনিয়ন্ত্রিত ওজন। ১০ পাউন্ড ওজন কমানোর মাধ্যমে সিস্টোলিক এবং ডায়াস্টোলিক প্রেশার যথাক্রমে ৪.৫ এবং ৩.২ মিলিমিটার পারদ চাপ কমানো সম্ভব। তাই উচ্চ রক্তচাপ কমাতে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার বিকল্প নেই।

২. ব্যায়াম এবং শারীরিক পরিশ্রম বাড়িয়ে নিজেকে সুস্থ রাখুন

Image by Hannah Wells from Pixabay

সবচেয়ে সহজ ব্যায়াম হচ্ছে হাঁটা। অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এছাড়া অন্যান্য ব্যায়াম যেমন সাইক্লিং, জগিং, সাঁতার কাটতে পারেন। সপ্তাহের বেশ কয়েকদিন কার্ডিও এক্সারসাইজ করুন অন্তত ৩০ মিনিটের জন্য।

৩. অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বদলে ফেলুন

চিনি যুক্ত খাবার
Image by RitaE from Pixabay

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে চিনিজাতীয় খাবার ও পরিশোধিত শর্করা কম খেলে ওজন কমে। যার ফলে রক্তচাপও কমে। চর্বিযুক্ত গোরুর, খাসির মাংস কম খান। অসম্পৃক্ত চর্বিযুক্ত খাবার যেমন—মাছের তেল, সূর্যমুখী, জলপাই প্রভৃতির তেল, বাদাম ও বীজজাতীয় খাবার বেশি করে খান। খাদ্য তালিকায় প্রচুর তাজা ফল ও সবজি রাখুন। পটাসিয়ামযুক্ত খাবার বেশি খান।

৪. পাতে আলগা লবণ খেলে উচ্চ রক্তচাপ বাড়ার ঝুঁকি বাড়বে

লবণ
Image by Bruno /Germany from Pixabay

কম লবণযুক্ত খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। লবণের উপাদান হল সোডিয়াম। যা কিডনির মাধ্যমে শরীরের পানি ধরে রেখে রক্তচাপ বাড়ায়। সারাদিনে প্রায় ১ চা চামচের(৫ গ্রাম) বেশি লবণ খাবেন না। পাতে অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করুন।

৫. প্রক্রিয়াজাত খাদ্য পরিহার করে চললে উচ্চ রক্তচাপ কমবে

Image by Daniel Friesenecker from Pixabay

উচ্চ রক্তচাপ কমাতে প্রক্রিয়াজাত খাবার বর্জন করে চলুন। প্রক্রিয়াজাত করা মাংস, ক্যানড ফুড, চিপস, সুপ এবং অন্যান্য স্ন্যাকসে প্রচুর পরিমাণে লবণ ও চিনি ব্যবহার করা হয়। একারণে এসব খাবার আমাদের রক্তচাপ কমানোর পথে অন্তরায়।

৬. তামাক, তামাকজাত দ্রব্য গ্রহণ এবং মদ্যপান থেকে বিরত থাকুন

Image by Free-Photos from Pixabay

ধূমপানের ফলে সাময়িক ভাবে রক্তচাপ বাড়ে। সিগারেট সহ অন্যান্য তামাকজাত দ্রব্য পরিহার করার মাধ্যমে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। সিগারেটে উপস্থিত নিকোটিন রক্তনালীর গায়ে প্রদাহ সৃষ্টি করে। রক্তনালীর প্রাচীর শক্ত করে দেয়। পরিণামে রক্তচাপ বাড়ে। মদ্যপানের ফলেও রক্তচাপ বাড়ে।

৭. উচ্চ রক্তচাপ কমাতে ক্যাফেইন কে না বলুন

Image by Free-Photos from Pixabay

ক্যাফেইন রক্তচাপ বৃদ্ধি করে। সাধারণত প্রতিদিন ২০০ মিলি গ্রামের বেশি ক্যাফেইন পান করা উচিত না। ক্যাফেইন রক্তনালী প্রসারিত করার হরমোনকে বাধা প্রদান করে। সেজন্য রক্তনালী সংকুচিত হয়ে সাময়িক ভাবে রক্তচাপ বাড়ে।

৮. রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়মিত মাপুন এবং প্রয়োজনে চিকিৎসা গ্রহণ করুন

Image by andy_free from Pixabay

রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেশি থাকলে রক্তনালীর প্রসারণ ক্ষমতা কমে যায়। রক্তনালী শক্ত হয়ে হয়ে যায়। এমতাবস্থায় রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের কারণেও রক্তচাপ বাড়ে।

৯. দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকুন এবং পর্যাপ্ত ঘুমানোর অভ্যাস করুন

Image by Med Ahabchane from Pixabay

অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকুন। যাদের নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুম হয়না তাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা কষ্টকর। দৈনিক ৮ ঘণ্টার কম ঘুম, অতিরিক্ত কাজের চাপ, মানসিক অশান্তি এসবের কারণে রক্তচাপ বাড়ে। এসব অবস্থায় শরীর ফাইট-অর-ফ্লাইট মুডে থাকে। তখন হৃৎস্পন্দন বেশি থাকে, রক্তনালি সংকুচিত হয়। উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ে।

১০. নিয়মিত রক্তচাপ মাপুন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিন

Image by tomwieden from Pixabay

উচ্চ রক্তচাপ নির্ণীত হলে ডাক্তারের পরামর্শ মতো ওষুধ সেবন করতে হবে। রক্তচাপ অনেক বেশি বেড়ে গেলে মাথাব্যথা বা ভারী লাগা, চোখ ব্যথা বা ঝাপসা দেখা, নাক দিয়ে রক্ত পড়া, শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া এসব সমস্যা হতে পারে। তাই নিয়মিত ওষুধ সেবন করুন।

উচ্চ রক্তচাপ কমানোর জন্য এই নিয়মগুলো আপনাকে সুস্থ জীবন যাপনে অনেক সাহায্য করবে। নিজে মেনে চলুন, অন্যকে উৎসাহিত করুন। লেখাটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ ‘দেহ’র সাথে থাকার জন্য।

Leave your vote

-1 points
Upvote Downvote

Comments

0 comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *