কানের ব্যথা হয়নি এমন লোকের সংখ্যা কমই আছে। এটি একটি যন্ত্রণাদায়ক অভিজ্ঞতা, যা আমাদের স্বাভাবিক কাজকর্মের ব্যাঘাত ঘটায়, মানসিক ও শারীরিক ভাবে আমাদের অসুস্থ করে ফেলে। সৌভাগ্যবশত ঘরে বসেই কিছু কাজের মাধ্যমে আমরা এর থেকে প্রতিকার পেতে পারি।
তাই আমরা দেহ আপনার সাথে কিছু টিপস শেয়ার করব যা এই ব্যথা উপশমে সাহায্য করবে। টিপসগুলোর ব্যবহারিক প্রয়োগের আগে একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে ভুলবেন না।
কানে ব্যথা হয় কেন?

চলুন প্রতিকারের আগে কানের ব্যথার কারণগুলো আগে জেনে নেয়া যাক। কানের ব্যথার সবচেয়ে সাধারণ কারণ হলো তীব্র ওটাইটিস মিডিয়া। বিশেষ করে বাচ্চারা এতে বেশি ভোগে। কানের একটি অংশ হল ইউশ্চিয়ান টিউব, এটি ব্লক হয়ে কানের ভিতর একধরনের তরল জমে। পরবর্তীতে সেখান থেকে সংক্রমণের শুরু হয় এবং কান ব্যথা করে। এধরনের ব্যথার অন্য কারণগুলো হল ভারী কানের দুল, দাঁতে সমস্যা, সাইনাস বা গলায় সংক্রমণ এবং আঘাত লাগা। এসব কারণেই মূলত ব্যথা হয়ে থাকে।
১. কানের ব্যথায় ওভার দ্যা কাউন্টার ড্রাগ

যেসব ওষুধগুলো ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়াই ব্যবহার করা যায় তাদের ওভার দ্যা কাউন্টার ড্রাগ বলা হয়। এসিটামিনোফেন, আইবুপ্রোফেন এবং অ্যাসপিরিন কানের সংক্রমণে ব্যবহার করা যায়। শিশুদের ক্ষেত্রে ব্যবহারের আগে ভাল করে ডোজ জেনে নেয়া উচিত, প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া যেতে পারে। ছোটো বাচ্চাদের ক্ষেত্রে অ্যাসপিরিন না ব্যবহার করাই ভালো।
২. থার্মাল প্যাড ব্যবহার করা
থার্মাল প্যাড বা কোল্ড প্যাড ব্যথা উপশম করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। ১০ মিনিট কানের উপর এই প্যাডগুলি ব্যবহার করুন। ঠান্ডা ও গরম একসাথে বা আলাদা আলাদাভাবেও প্রয়োগ করা যেতে পারে। শিশুদের কানে সরাসরি ঠাণ্ডা ব্যবহার করা যাবে না। দীর্ঘ সময়ের জন্য থার্মাল প্যাড ব্যবহার করা যাবে না। বয়স্কদের তদারকি ছাড়া বাচ্চাদের ব্যবহার করতে দেয়া উচিত নয়।
৩. কানের ব্যথায় অলিভ ওয়েল

যদিও এর কোন বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা নেই তবে কানের ব্যথার একটি জনপ্রিয় ঘরোয়া চিকিৎসা এটি। এর মোম জাতীয় উপাদান কানের ব্যথা কমায়। আমেরিকান একাডেমি অব পেডিয়াট্রিকস উল্লেখ করেছে যে, কানে উষ্ণ কয়েক ফোটা জলপাইয়ের তেল লাগালে অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি প্রভাব থাকতে পারে যা ব্যথা হ্রাস করতে পারে।
৪. প্রাকৃতিক ড্রপ

এই ড্রপগুলি ফার্মেসী বা অনলাইনে কেনা যায়। এগুলি ভেষজ উদ্ভিদ দিয়ে তৈরি হয় এবং ইয়ারওয়াক্স এবং তরলগুলির দ্বারা সৃষ্ট চাপ কমাতে কার্যকর। আবিষ্কার করা হয়েছে যে, এই ধরণের ভেষজ ওষুধ অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসার মতো কার্যকর। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে তাদের ব্যবহারের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
৫. ম্যাসাজ করে কানের ব্যথা কমানো যায়
কানের পেশিতে হালকা ম্যাসাজ করা একটি সহজ উপায়। কানের পিছনে শুরু করে, ঘাড়ের নীচের দিকে অগ্রসর হয়ে এবং তারপরে সামনের দিকে আলতো করে ম্যাসাজ করার চেষ্টা করুন। এই ধরণের ম্যাসাজ কানের সংক্রমণ এবং অতিরিক্ত তরল জনিত কারণে ব্যথা প্রশমিত করতে সহায়তা করে।
৬. কানের ব্যথা দূর করবে আদা

আদা তার সক্রিয় প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের জন্য ব্যথা হ্রাস করতে সহায়তা করতে পারে, পাশাপাশি এর অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্যও রয়েছে। সরাসরি কানে না রেখে কেবলমাত্র বাইরের কানের চারপাশে উষ্ণ আদার রস লাগান।
৭. রসুন কানের ব্যথা দূর করতে অসাধারণ

বহু বছর ধরে, রসুন ব্যথা উপশম করতে এবং সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়তা হিসাবে ব্যবহৃত হয়, এর প্রদাহ বিরোধী এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্যে রয়েছে । ব্যথা এবং অস্বস্তি প্রশমিত করতে, গুঁড়ো রসুনকে কয়েক মিনিটের জন্য তিলের তেলে ভিজিয়ে রাখুন। তারপরে এটি ছড়িয়ে দিয়ে কানের খৈলে লাগান।
৮. পারঅক্সাইড

হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড বহুল ব্যবহৃত এবং জনপ্রিয় একটি অ্যান্টিসেপ্টিক যা ক্ষত নিরাময়ে ব্যবহার করা হয়। কানের জন্য প্রতি ৩-৪ ঘণ্টা পর পর ৩-৫ ফোঁটা দিয়ে কয়েক মিনিটের জন্য রেখে পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।
৯. কানে চাপ না দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করা
যে পাশের কানে ব্যথা সে পাশে যেন ঘুমের সময় চাপ না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অতিরিক্ত বালিশ দিয়ে মাথা উঁচু করে ঘুমবেন এবং নরম বালিশ ব্যবহার করতে পারেন।
১০. কানের ব্যথা দূর করে যষ্টি মধু

© Jovanmandic / GettyImages © scis65/ Depositphotos
গবেষণায় দেখা যায় যষ্টি মধুর অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি এবং অ্যান্টিবায়োটিক উপাদানগুলি কানের ব্যথা উপশম করতে পারে। এক চামচ যষ্টি মধু ও মাখান মিশিয়ে হালকা গরম করে কানের খৈলের বাহিরের দিকে দিয়ে রাখুন এবং ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
আপনি কি এই প্রাকৃতিক প্রতিকার সম্পর্কে জানতেন? আপনি তাদের কোন ব্যবহার করেছেন? কমেন্ট করে আমাদের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন।
প্রবাচ/রায়হান/পলাশ
Comments
0 comments
Share on: