গর্ভাবস্থা প্রত্যেক নারীর জন্য জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। কিন্তু করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে গর্ভবতী মায়েদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাজ যেন বেড়েছে। নানা উদ্বেগ, ভয় ও অনিশ্চয়তা ভর করছে সন্তান সম্ভবা নারীদের উপর। করোনার প্রাদুর্ভাবে গর্ভবতীদের সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করার মাধ্যমেই কেবল মা ও শিশুর সুস্থতা নিশ্চিত করা যাবে।
আপনি কি গর্ভবতী? কিংবা বাচ্চা নিতে চাচ্ছেন? তাহলে আপনার জন্যই এই লেখাটি। গর্ভাবস্থায় নিজের এবং বাচ্চার সুরক্ষায় কি কি করণীয় তা নিয়ে আজ আলোচনা করবে ‘দেহ‘। পুরো লেখাটা ভালো ভাবে পড়ে জেনে নিন খুঁটিনাটি।
১. গর্ভবতী নারী করোনাভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কতখানি বেশি
করোনা ভাইরাসে নতুন আবিষ্কৃত হওয়ায় খুব কম তথ্য জানা গেছে এ সম্পর্কে। সিডিসি জানিয়েছে গর্ভবতী নারীরা করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি কিনা সে সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে গর্ভাবস্থায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে, ইনফেকশনের ঝুঁকি এমনিতেই বেশি থাকে। তাই করোনার জন্য বাড়তি সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
২. করোনাভাইরাস মায়ের পেট থেকে বাচ্চাতে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা কম
করোনা আক্রান্ত কিছু মায়ের অ্যামনিওটিক ফ্লুইড, কর্ড এবং প্লাসেন্টা পরীক্ষা করে করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। তবে রয়েল কলেজ অফ অবস্টেট্রিশিয়ান এর একটি রিপোর্টে মা থেকে সন্তানে সংক্রমণের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে সংক্রমণ গর্ভাবস্থায় নাকি জন্মের পরে হয়েছে তা নিশ্চিত করা হয়নি।
৩. ডাক্তারের কাছে রুটিন চেকআপের সংখ্যা কমাতে হবে
সাধারণত গর্ভাবস্থায় অন্তত চারবার ডাক্তারের কাছে চেকআপের জন্য যাওয়ার প্রয়োজন হয়। করোনার মহামারিতে মা ও বাচ্চার নিরাপত্তার জন্য সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা জরুরি। স্থানীয় প্রসূতি সহায়তা কেন্দ্র থেকে স্বাস্থ্য কর্মীদের বাড়িতে ভ্রমণ এক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে। এছাড়া ফোন কলের মাধ্যমে ডাক্তারের সেবা নিয়ে ঝুঁকি কমানো যাবে।
৪. পর্যাপ্ত পরিমাণে সুষম খাবার খাবার খেতে হবে
গর্ভবতী মায়ের বাড়তি পুষ্টির প্রয়োজন হয়। বাড়তি চাহিদা পূরণে মাকে অতিরিক্ত খাবার দিতে হবে। করোনা প্রতিরোধে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোও জরুরি। বেশি বেশি সবুজ, হলুদ, লাল শাকসবজি ও ফল খাবেন। এছাড়াও ডিম, দুধ, ঘন ডাল খাবেন
৫. সংক্রমণ ঝুঁকি এড়াতে সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা প্রয়োজন
পরিবার অসুস্থ কারো সংস্পর্শে না আসার চেষ্টা করবেন। পরিবারের সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে উৎসাহিত করবেন বাচ্চার কথা চিন্তা করে। জ্বর, কাশি বা শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
৬. করোনার আক্রান্ত হওয়ার সন্দেহ হলে করণীয়
করোনাভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা দিলে স্বাস্থ্য বাতায়নের সংশ্লিষ্ট নাম্বারে ফোনে যোগাযোগ করবেন। অবশ্যই জানাবেন আপনি গর্ভবতী। কর্তৃপক্ষ আপনার সাথে যোগাযোগ করে পরীক্ষার ব্যবস্থা করবে।
৭. করোনা পরীক্ষা পজিটিভ আসলে কী করবেন
করোনা আক্রান্ত হয়েই গেলে আপনাকে ব্যবস্থা নিতে হবে। মৃদু লক্ষণের ক্ষেত্রে বাড়িতেই সেলফ আইসোলেশনে থাকতে হবে। তবে গুরুতর লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই হাসপাতালে চিকিৎসা করতে হবে।
৮. করোনা আক্রান্ত হলেই গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি নেই
করোনা সংক্রমিত নারীদের বাচ্চার অকাল জন্মের মত সমস্যা দেখা গেছে। তবে নিশ্চিতভাবে বলা কঠিন যে এসব জটিলতা করোনার কারণেই হয়েছে। সুতরাং আতঙ্কিত হবেন না গর্ভপাতের ব্যাপারে।
৯. করোনা আক্রান্ত মা এর সাথে বাচ্চাকে রাখা যাবে কিনা
করোনা আক্রান্ত মা থেকে বাচ্চাকে আলাদা না রাখা গেলে কিছু দূরত্ব বজায়ে রাখার চেষ্টা করতে হবে। বাচ্চার পরিচর্যা করার মত কেউ না থাকলে বাচ্চাকে ধরার আগে মায়ের সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিতে হবে।
১০. করোনা আক্রান্ত মা বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াতে কোনো সমস্যা নেই
বুকের দুধের মাধ্যমে করোনা সংক্রমণের সম্ভাবনা নেই। কিন্তু অন্যান্য মাধ্যমে মা থেকে বাচ্চাতে ছড়াতে পারে। বুকের দুধ বাচ্চার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তাই কোনো অবস্থাতেই বুকের দুধ বন্ধ করবেন না। বরং বুকের দুধ খাওয়ানোর আগে ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিন, মাস্ক পড়ুন। বাচ্চার ব্যবহার্য সমস্ত জিনিসপত্র খুব ভালো করে পরিষ্কার করুন।
গর্ভাবস্থা নিয়ে আপনার যদি আরো কোনো সমস্যার কথা জানার থাকে আমাদেরকে জানান। লেখাটি ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে তাদেরও জানার সুযোগ করে দিন। ধন্যবাদ দেহ’র সাথে থাকার জন্য।
Comments
0 comments
Share on: