ঘুমের সমস্যা হয়নি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া বেশ দুষ্কর। সারাদিনের পরিশ্রমের পর ক্লান্ত দেহ এবং মস্তিষ্ককে বিশ্রাম দিতে পরিপূর্ণ ঘুম হওয়া অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু বিভিন্ন কারণে অনেকেই রাতে ঠিক মত ঘুমাতে পারেন না। নিয়মিত এই ঘুমের সমস্যা যখন দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তখন একে ডাক্তারি ভাষায় বলে ইনসমনিয়া (Insomnia)।
প্রতিদিন একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের গড়পড়তা ৮ ঘণ্টা ঘুমের দরকার হয়। ঘুমের ব্যাঘাত ঘটলে তার সরাসরি প্রভাব পড়ে শারীর এবং মনের উপর। আজ ‘দেহ’ আপনাদের জানাবে ঘুমের এই সমস্যা থেকে মুক্তির কার্যকরী ১০টি উপায়।
১. মানসিক চাপ ঘুমের সমস্যা সৃষ্টি করে
দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন চিন্তা আমাদের মাথায় চব্বিশ ঘণ্টা ঘুরতে থাকে। এর ফলে সৃষ্টি হয় মানসিক চাপের। মানসিক চাপ বা স্ট্রেস অনিদ্রার একটি অন্যতম কারণ যা রাতের ঘুমকে বিঘ্নিত করে। সারাদিনের কর্মব্যস্ততার পরে, চাপ মুক্ত হয়ে ঘুমাতে গেলে অনিদ্রা জনিত সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
২. ঘুমানোর আগে ভারি খাবার নয়
অনেকেই রাতে ভারি খাবার খেতে পছন্দ করেন। এসব তেল মশলা জাতীয় খাবার পরিপাকে আমাদের পাকস্থলীকে প্রচুর চাপ নিতে হয়। রাতে ঘুমানোর আগে ভারী খাবার খেলে, তা ঘুমের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে। তাই ঘুমাতে যাবার আগে হালকা খাবার খাওয়ার অভ্যাস করুন।
৩. প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাবার অভ্যাস করুন
মানুষ এখন রাত জেগে বিভিন্ন কাজকর্ম সেরে ফেলতে চান। এতে দেখা যায় প্রতিদিনের নির্দিষ্ট ঘুমের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয় না। যার ফলশ্রুতিতে শারীরিক এবং মানসিক বিভিন্ন সমস্যায় ভুগে থাকেন অনেকে। তাই প্রতিদিন ঘুমাতে যাবার একটি নির্দিষ্ট সময় বেছে নিন।
৪. ঘুমানোর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন
রাতের বেলা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেমন, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে বেশ লম্বা সময় ধরে থাকেন অনেকে। ঘুমাতে যাবার আগে হাতের এই মুঠোফোন ব্যবহার করার ফলে চোখের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। তাছাড়া মোবাইল থেকে এক ধরণের নীল আলো বা ব্লু লাইট নির্গত হয় যা পরবর্তীতে নিরবচ্ছিন্ন ঘুমকে বাধাগ্রস্ত করে।
৫. সন্ধ্যার পর চা-কফি নয়
সন্ধ্যার পরে চা অথবা কফি খেলে, এতে থাকা ক্যাফেইন আপনাকে সতেজ রাখবে ঠিকই কিন্তু সমস্যা তৈরি করবে আপনার ঘুমে। তাই আপনি যদি নিয়মিত অনিদ্রা জনিত সমস্যায় ভুগে থাকেন, তাহলে মস্তিষ্ককে উত্তেজিত করে এমন পানীয় পান করা থেকে বিরত থাকুন।
৬. ঘুমানোর আগে এক কাপ দুধ
রাতের বেলা এক কাপ দুধ বা দুধ জাতীয় খাবার আপনার ঘুমকে সম্পূর্ণ করবে। কারণ দুধের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ট্রিপ্টোফ্যান নামক উপাদান। যা ঘুমের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে এবং ঘুমের উদ্রেক ঘটায়। তাই ঘুমানোর আগে এক কাপ দুধ পান করুন।
৭. ঘুমের সমস্যা দূর করে মেডিটেশন
মেডিটেশন বা ধ্যান স্নায়ুকে শান্ত করার একটা পদ্ধতি। নিয়মিত মেডিটেশন করার ফলে মনে শান্তি আসে এবং নির্মলতা অনুভব হয়। যা মানসিক চাপ থেকে দূরে রাখে। তাই প্রতিদিন সকালে বা ঘুমানোর আগে মেডিটেশনের অভ্যাস অনিদ্রা থেকে মুক্তি দিতে পারে।
৮. অতিরিক্ত ওজন ঘুমের সমস্যা তৈরি করে
যারা অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতায় ভুগছেন তারা ঘুমের মধ্যেই শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত সমস্যার মুখোমুখি হন। এতে করে অনেক সময় মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত রক্ত প্রবাহিত হয় না। যার ফলে স্থূলতায় আক্রান্ত ব্যক্তি ঘুম ভেঙ্গে জেগে উঠেন, তাই ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখা অত্যন্ত জরুরি।
৯. ঘুমানোর আগে বই পড়ার অভ্যাস করুন
আমাদের মন যতোই স্বাভাবিক ছন্দে থাকবে ঘুমটা হবে ততোটাই আনন্দের। সারাদিনের ক্লান্তির পর রাতে ঘুমাতে যাবার সময় বই পড়ার অভ্যাস মনকে শান্ত করে তোলে। তাই ঘুমানোর আগে নিজের বিছানায় বা আরাম দায়ক পরিবেশে বই পড়ার চর্চা ঘুমকে নির্বিঘ্ন করবে।
১০. হালকা ব্যায়াম ঘুমের সমস্যা তাড়ায়
সকালে ঘুম থেকে উঠে সাধারণ কিছু ব্যায়াম করতে পারেন। সকালে হাতে সময় না থাকলে রাতে ঘুমানোর আগে আধা ঘণ্টা হাঁটা-চলা অথবা অল্প কিছু ব্যায়াম করলে সেটা অসম্পূর্ণ ঘুম বা অনিদ্রা থেকে মুক্তি দেবে। তাই প্রতিদিন ব্যায়াম করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
ঘুম না এলে আপনি কী করেন? ঘুমের সমস্যা গুরুতর হলে আমাদের জানাতে পারে। আমাদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা আপনাকে যথাযথ চিকিৎসা পরামর্শ দিয়ে সারিয়ে তোলার চেষ্টা করবেন। এছাড়াও যেকোনো স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে যোগাযোগ করুন আমাদের ফেসবুক পেজের ইনবক্সে।
Comments
0 comments
Share on: