বাংলাদেশে ৭২ বছরেরও বেশি সময় ধরে যে প্রতিষ্ঠানটি নিরলসভাবে শিক্ষা ও সেবা প্রদান করে আসছে সেটা হলো ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ । ঢামেক অথবা ডিএমসি নামেই অধিক পরিচিত এই প্রতিষ্ঠান দেশের উন্নয়নশীল স্বাস্থ্যখাতের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। দেশ ও বিদেশের মেডিক্যালে পড়তে ইচ্ছুক মেধাবী শিক্ষার্থীদের স্বপ্নের ঠিকানা, অসহায় মুমূর্ষু রুগিদের আস্থার উৎস এই মেডিক্যাল।
বাংলাদেশের রাজধানীর বকশীবাজার এলাকায় ২৫ একর জমি জুড়ে অবস্থিত এই স্বনামধন্য সরকারি মেডিক্যাল কলেজ নিয়েই আজকে দেহ’র এই প্রতিবেদন। আসুন তাহলে দেরি না করে আমরা জেনে নিই, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের গৌরবময় ইতিহাস, শিক্ষা ও সেবার ব্যবস্থা, আর এই প্রতিষ্ঠান-প্রদত্ত আধুনিক সুযোগ সুবিধার ব্যাপারে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ এর ইতিহাস
https://www.facebook.com/HumansofDMC/photos/a.1764769000442216/1882042425381539/?type=3&theater
ঢামেক-এর প্রথম ব্যবহৃত ভবন নির্মাণ করা হয়েছিল ১৯০৪ সালে , সেটি তৎকালীন সময়ে পূর্ব বাংলার সেক্রেটারিয়েট বিল্ডিং হিসেবে ব্যবহৃত হতো। ১৯২১ সালে এর বদলি হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিল্ডিংয়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই ভবনটি ‘আমেরিকান আর্মড ফোর্সেস হাসপাতাল’ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অবশেষে, ১৯৪৬ সালের ১০ই জুলাই এই প্রতিষ্ঠান স্বতন্ত্রভাবে এর ঐতিহাসিক পথচলা শুরু করে। আজও দিনটি প্রতি বছর ‘ডিএমসি ডে’ হিসেবে জাঁকজমকের সাথে পালন করা হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ এর ‘কে-কথা’
https://www.facebook.com/HumansofDMC/photos/a.1911584319094016/2153596881559424/?type=3&theater
১৯৪৭ এর ভারত বিভাগের সময় কলকাতা মেডিক্যলের কে-১ থেকে কে-৪ পর্যন্ত ৪টি ব্যাচ ও অভিজ্ঞ শিক্ষকদের ঢামেকের মান উন্নয়নের জন্য এই কলেজে নিয়ে আসা হয়। কলকাতা মেডিক্যালের এই অবদান এর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য কলেজ অথরিটি সিদ্ধান্ত নেয় যে ঢামেকের প্রতিটি ব্যাচের নামের পূর্বে ‘কে’ যোগ করতে হবে। এখন পর্যন্ত এই রীতি মেনে চলছে ঢাকা মেডিক্যালের শিক্ষার্থীরা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ এর অবস্থান
https://www.facebook.com/DMC1946/photos/a.1755540918076154/1755540901409489/?type=3&theater
ঢাকা মহানগরীর বকশীবাজারে এই মেডিক্যালের অবস্থান। হাসপাতালের বহির্বিভাগের পাশেই জাতীয় শহিদ মিনার। মেডিক্যালের একদিকে রয়েছে বুয়েট ক্যাম্পাস, আর অন্য পাশে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু অংশ।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসের চারপাশ
https://www.facebook.com/609499232490257/photos/bc.Abq2cfZzEmG8C0pu255r2_vR9464-Stb1ENJIbZw09LQqvCjZ5dPNg8BDAmPq8q1ysCW4alCUBA5W1OVtIGxpds7XkLrnJ1vubLmPHgTWTgAjXglbwkWXZ9RvtCuc5MkbsUdW0og5V43WMIkGdX3v47I5xtvvPXH4iVMCBHZdHV_rNmdHmEp1v5jR3TNS4Gnwxm2cvceE7ZIvi2b2ey0nz1AVEMCQGPLi_q2fqjM80hBqH2r3IoYDBUkS_yDkeUJrwCfeKFYC0Mdxh63Cw6t971VTqtPon2lHSPf-MT0xXjbz66J6GFoHo5GO-mToo2KBEmGZmTcw3Vq8UlkwKyh7DERw6G3TKllmtw4R0537ONVTx5JIUVGNxfcokC9YKssyb-vSzzvY8jzRMtcInekMHtX0ij8PtDDLlzwls1IVSqkZHmZ_8axOBbgQixHKn8Ch_o/937934502980060/?type=1&opaqueCursor=AbpkkqL5ciQnp04e-frjBg_aM00FaPwHZp_PyaITbNP0PmT-XXciDK7MHl18c-NNM3zyx2eKZ4bJIJUneMkVFqpVW0U9lK-2-G5nlPAdTaaMlLNBH8a0H2N1hWznhu2XBNuRPQ1QlwVXl0smcKnnJWkyO4aEmiSj9UK9So-RPVgAtxEv4QcNhHhFWO1jzhLKWsvbw_rqfujNk9me5Rz2BWdM2Nvzte4G2SNtGjQiMytbNnbHVp3mC8M7xkwoiGUb44Y9de7FhaUVscAg7bG3KdYg3aC3UIrI-xt6bBmVTnczgz-OxUMysHkb5XYekHaenCaZ2NyjD6xJwTvanNnmGMWs6JrC04I_W7aWz7zXi5x-OAgEQoS7-UxvZkPExdL8ekIj_QF_B-8TqTrPup5-GSITCiho026IkJSuX6M620FMmwGsfwB_drVWmoP384iMbvskqz3oAkiP6BvWHa0MsZmNSZT5gebVbh3s4-Vi4L3BFyM0w6G28TtqEtWDpFwzqNoOkn_A7420GJ6QKUPnKFRf1EP4EAa1slhB2cH0CnaEaA&theater
মেডিক্যাল ক্যাম্পাসের প্রাণকেন্দ্র হল মিলন চত্বর। চত্বরের এক পাশে শহিদ ডা. মিলনের কবর। চত্বরের ঠিক সামনে রয়েছে একাডেমিক ভবন কমপ্লেক্স। কলেজ বিল্ডিংয়েই আছে লেকচার গ্যালারি, কলেজ ক্যানটিন, অফিস, অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের কক্ষ। আরও রয়েছে শিক্ষার্থীদের কোলাহলেপূর্ণ ঘাস চত্বর। যে-কোনো ধরনের অনুষ্ঠানে এই চত্বরটি বর্ণাঢ্যভাবে সাজানো হয়।
কলেজ বিল্ডিংয়ে আছে ১২ টি সাবজেক্টের আলাদা ডিপার্টমেন্ট, ৮ টি ল্যাব, ৫ টি পরীক্ষার হল, ২টি কনফারেন্স রুম, একটি এনাটমি মিউজিয়াম, মর্গ ও ডিসেকশন হল। শিক্ষার্থীদের জন্য আছে দুটো কমনরুম, একটি রিডিং রুম ও একটি লাইব্রেরি। সম্প্রতি একাডেমিক ভবনের সাথে একটি নতুন উইং যুক্ত করা হয়েছে।
কলেজ বিল্ডিং ছাড়াও ক্যাম্পাসে আছে একটি অডিটোরিয়াম ও আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন ‘নিউক্লিয়ার ভবন। ছেলেদের জন্য রয়েছে শহিদ ডা. ফজলে রাব্বি হল আর মেয়েদের আছে শহিদ ডা. আলীম চৌধুরী হল। ইন্টার্নদের জন্য আছে শহিদ ডা. মিলন হল।
হাসপাতালের মূল আকর্ষণ
https://www.facebook.com/HumansofDMC/photos/a.1764671653785284/1770525746533208/?type=1&theater
হাসপাতালে আছে ৩৪ টি ডিপার্টমেন্ট, ৪২ টি ওয়ার্ড এবং ২৩০০ বেড। দেশের এই বিখ্যাত হাসপাতালে ২৩৪ ডাক্তার, ১৪০ জন ইন্টার্ন, ৫৬০ জন নার্স ও ১১০০ এর মতো অন্যান্য স্টাফ উন্নত মানের সার্বক্ষণিক ইনডোর ও আউটডোর স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে পালন করছে সক্রিয় ভূমিকা। সম্প্রতি হাসপাতালটিতে একটি নতুন বিল্ডিং ও বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন এর ব্যবস্থা সংযোজিত হয়েছে। প্রতিদিন এই বিশাল হাসপাতালটি ৩৫০০ এরও অধিক রুগিকে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে থাকে।
ঢামেকের সূর্যসন্তানেরা
https://www.facebook.com/HumansofDMC/photos/a.1764769000442216/1828827820703000/?type=3&theater
বাংলাদেশের ইতিহাসের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে ঢাকা মেডিক্যালের নাম। ’৫২’-এর ভাষা আন্দোলনে এখানকার শিক্ষার্থীরাই নেতৃত্ব দিয়াছিল। ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে শহিদ হয়েছিলেন ডা. ফজলে রাব্বি, ডা. আলীমসহ ২২ জন ডিএমসিয়ান। ’৯০’-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নিহত হন ডা. শামসুল আলম খান মিলন। দেশের প্রতিটি কোনায় আজ ডিএমসিয়ানরা আলোর মশাল হাতে পৌঁছে গেছেন। চিকিৎসাক্ষেত্র ছাড়াও আরও নানান ক্ষেত্রে ডিএমসিয়ানরা পালন করছেন অগ্রণী ভূমিকা।
ঢাকা মেডিক্যালের প্রাণের উৎস হলো এখানকার মেধাবী, পরিশ্রমী শিক্ষার্থীরা । তাদের হাস্যরস, সৃজনশীলতা, আর মানবসেবায় নিজেকে উৎসর্গ করার প্রবল ইচ্ছাই এই প্রতিষ্ঠানটিকে আজ ঐশ্বর্যের চূড়ায় পৌঁছে দিয়েছে। প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ জনতার পীড়া দূর করে আর দুই শতাধিক শিক্ষার্থীর ডাক্তার হওয়ার আশাকে পূর্ণতা দিয়ে এগিয়ে চলেছে দেশের সর্বোত্তম মেডিক্যাল কলেজ।
নাভিরা/প্রবাচ/পলাশ
Comments
0 comments
Share on: